জিপি নিউজঃ দক্ষিণ আফ্রিকার দারিদ্র্য-পীড়িত শহর ডিয়েপস্লুট। কিন্তু অভাবের চেয়েও এখন এই শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা- নিরাপত্তাহীনতা। বিশেষ করে এখানকার প্রতিটি নারীকে প্রতিনিয়ত থাকতে হয় ধর্ষণ আতঙ্কে ।
অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা । ফলে এখানকার পরিস্থিতি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, এমনকি অনেকে ধর্ষক পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।
কিভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার এই শহরটি সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হল?
দেশটির পিছিয়ে পড়া এই শহরটি নারীদের জন্য কতোটা বিপদজনক তার আভাস পাওয়া যায় স্থানীয় ভুট্টা বিক্রেতা মারিয়ার ভাষ্যে। তিনি জানান রাত ঘনালেই এই শহর নরকে পরিণত হয়।
মিসেস মারিয়া বলেন, “আমি জানি এখানে অনেক নারীকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। আমার ভাবতে কষ্ট হয়, ভয়ও লাগে। কারণ কে জানে একদিন হয়তো আপনার নিজের কেউ এর শিকার হতে পারে। মেয়েরা শুধুমাত্র বাড়ির ভেতরেই নিরাপদ। কেউ যদি প্রয়োজনে একটু বের হয় তাহলে তার ওপর ভয়ংকর নির্যাতন চলে।”
তবে নিজ বাড়িতে থেকেও রক্ষা পাননি মিসেস মারিয়া। তিন মাস আগেই তিনি দুইবার ধর্ষণের শিকার হন, একই ব্যক্তির দ্বারা। সেসময় তার চার বছর বয়সী মেয়েটি তার বাড়িতেই ছিল।
মিসেস মারিয়া জানান সেই বিভীষিকাময় দিনটির কথা।
“আমার মেয়েটা পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ ওই লোকটা আমার বাড়িতে ঢুকে মোবাইল আর টাকা চাইলো। আমি গরিব, ওসব আমার কিছুই ছিল না। তখন সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে নির্যাতন চালায়। আমি চিৎকার করতে পারিনি। চাইনি মেয়েটা জেগে উঠুক। ভয় পেয়েছিলাম, যদি তার সাথেও এমন কিছু হয়?”
এখানকার স্থানীয় এক সাংবাদিক গোল্ডেন মাটিকা। তিনি জানালেন এই শহরটি কিভাবে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে?
“অপরাধীরা এখানে অনেক নিরাপদ। যারা কোন অপরাধ করে না, তাদের চাইতে অনেক আরামে আছে তারা। কারণ এই শহরে তারা যা খুশি তাই করতে পারে। তারা জানে তাদের ভয়ে কেউ রাতে বের হবে না”।
মিস্টার মাটিকা তার টেলিভিশন প্রামাণ্য চিত্রের জন্য নারীদের ওপর নিপীড়নের বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেন।
সেখানে ডিয়েপস্লুট শহরের অন্তত এক তৃতীয়াংশ পুরুষ স্বীকার করেছে যে তারা নারী ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত।
তাদের মধ্যে এমন দুই ব্যক্তি ছিল যারা ক্যামেরার সামনে নির্দ্বিধায় জানায় তারা ধর্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্বিত। ওই ভিডিওতে তারা বর্ণনা করে নিজেদের সেসব অপকর্মের কথা।
“কোন বাড়ির দরজা খোলা পেলেই ভেতরে ঢুকে যেতাম। তারপর ছুরি বের করে নারীদের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করতাম।”
এই নির্যাতন ওই নারীর ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে -এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ওই ব্যক্তি বলেন,
“এমন বিষয় কখনোই মাথায় আসেনি। কারণ তখন মাথা ঠিক থাকে না।”
এ ধরণের মানুষের নির্লজ্জতা বা বেহায়াপনা দেখে এখন আর কেউই অবাক হয়না। কেননা প্রতিবার ভয়াবহ অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় তারা।
গত পাঁচ বছরে পুলিশের কাছে ধর্ষণের পাঁচশ মামলা দায়ের করা হলেও বিচার হয়েছে মাত্র একটির।
বিচারহীন এই সমাজে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় স্থানীয়রা এখন নিজেরাই নিজেদের নিয়ম তৈরি করেছে।
তেমনই একটি ভয়াবহ উদাহরণ সৃষ্টি শহরের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। যে
অভিযোগ রয়েছে, শহরের এ প্রান্তেই সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়।
কয়েক মাস আগেই এই নদীর তীরে কয়েকজন সন্দেহভাজন অপরাধীকে পিটিয়ে এবং পুড়িয়ে মেরে ফেলে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
মিস্টার মাটিকা সেই দৃশ্য তার ক্যামেরায় ধারণ করেন। কি ঘটেছিল সেদিন? জানান মিস্টার মাটিকা
“ওইদিন দাঙ্গাকারীরা তিন সন্দেহভাজন ধর্ষককে ধরে আনে। তারা আরো নানা ধরণের অপরাধে জড়িত ছিল বলেও অভিযোগ। জনতা তাদের প্রচুর মারধোর করে। একজনের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাঙ্গা থামাতে পুলিশের একটি দল আসে ঠিকই কিন্তু তারা সংখ্যায় অনেক কম ছিল। পরে তারা ব্যাকআপের জন্য আরো পুলিশ ডাকে। ওই সন্দেহভাজনদের ততোক্ষণে প্রায় আধমরা অবস্থা।”
ডিয়েপস্লুট শব্দের অর্থ “গভীর খাদ”। আর এখানকার মানুষ নিজেদের জীবনকে এই ময়লার ভাগাড়ের সঙ্গে তুলনা করেন, যেখানে তাদের নিরাপত্তার কোন মূল্যই নেই। যেখানে তাদের আবর্জনার মতোই ছুঁড়ে ফেলা হয়।
সুত্র- বিবিসি